আট টাকার লবন বিক্রি হচ্ছে ত্রিশ টাকায়
লবন ব্যবসায়ীদের কারসাজি ঠেকাতে
পারেনি বাণিজ্যমন্ত্রণালয়
লবন ব্যবসায়ীদের কারসাজি ঠেকাতে পারেনি বাণিজ্যমন্ত্রণালয়। পরে বাধ্য হয়ে অনুমোদন দিয়েছেন আমদানি। মাঠ পর্যায়ে লবনের উৎপাদন খরচ আট টাকা হলেও তা বিক্রি করা হচ্ছে ত্রিশ থেকে পয়েত্রিশ টাকা। এটি বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য। আর ট্যারিফ কমিশন বলছে, দেশের যে প্রতিষ্ঠানগুলো লবন উৎপাদন করছে তারা তাদের স্বক্ষমতার পঞ্চাশ শতাংশও ব্যবহার করছে না। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় লবনের দাম বাড়ছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব গোলাম হোসেন বলেন, রমজানে অযৌক্তিকভাবে ব্যবসায়ীরা লবণের দাম বাড়িয়েছে। বর্তমানে জনগণের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে লবণ বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা তুলনায় বেশি লবণ আমদানি করা হয়েছে। রমজানের আগে শিল্প মন্ত্রণালয় ও লবণ উৎপাদনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে লবণ আমদানি উন্মুক্ত করা হয়।
তিনি বলেন, লবণ নিয়ে আমরা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। অন্যান্য পণ্যগুলো মনিটরিং করতে পারলেও লবণের ক্ষেত্রে তা হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতি কেজি লবণের দাম ২০ টাকা ওপরে কোনোভাইে হতে পারে না। প্রতিকেজি লবণ আমদানি করতে খরচ হয় ২ দশমিক ৮০ টাকা। প্রক্রিয়াজাত করতে মোট খরচ হতে পারে ৭ থেকে ৮ টাকা। মুনাফাসহ প্রতিকেজি ১৯ থেকে ২০ টাকা উপরে মূল্য হওয়ার কোনো যুক্তিকতা নেই। কিন্তু ব্যবসায়ীরা প্রতিকেজি লবণ ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি করছে। এ বিষয়ে গত রোববার লবণ মিল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে লবণের মূল্য কমানোর আহ্বান জানানো হলে ব্যবসায়ীরা সরকারকে দাম কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে ট্যারিফ কমিশনের তথ্য কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, ২০১২ সালে আন্ত:মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে মোট ১৫ কোটি ৬৯ লাখ মানুষের দৈনিক ১৭ গ্রাম লবণ হিসাবে বছরে ভোজ্য লবণের চাহিদা ধরা হয় ৯ দশমিক ৩০ লাখ টন। কিন্তু এর সঙ্গে শিল্পের কাঁচামাল ও গবাদী পশুর খাদ্য বাদ পড়ায় নতুন করে পরিসংখ্যান করা হয়। এতে দেখা যায়, বছরে লবনের চাহিদা রয়েছে ২০ লাখ ৫৬ হাজার টন।
তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে অপরিশোধিত লবন ভোগের জন্য ব্যবহার করা হয় ১৫ দশমিক ৪৫ লাখ মেট্রিক টন যা মোট চাহিদার ৭৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। এছাড়া শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ২ দশমিক ৮৪ লাখ মেট্রিক টন এবং হাস, মুরগী, মৎস ও গবাদি পশুর খাবারে ব্যবহৃত হয় ২ দশমিক ২৭ লাখ টন।
বর্তমানে যে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিশোধিত লবন উৎপাদন করে তারা মোট চাহিদার ৫০ শতাংশও উৎপাদন করে না। ট্যারিফ কমিশনের এক তথ্যে দেখা যায়, এসিআই সল্টের মাসিক লবন উৎপাাদন ক্ষমতা ১৩ হাজার ২০০ টন কিন্ত প্রতি মাসে কোম্পানিটি উৎপাদন করছে মাত্র চার হাজার টন। কনফিডেন্স ব্যান্ডের মাসিক উৎপাদন ক্ষমতা ছয় হাজার টন। বিপরীতে মাসে উৎপাদন হচ্ছে চার হাজার টন। মোল্লা, ফ্রেস, পূবালী, ইফাদ এবং মধুমিতা ব্র্যান্ডের মাসিক উৎপাদন ক্ষমতা নয় হাজার থেকে ছয় হাজার টন হলেও এদের কেউ-ই মাসে চার হাজার টনের বেশি উৎপাদন করে না।
সম্প্রতি লবনের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসাবে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তথ্যে বলা হয়েছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে অপরিশোধিত লবনের চাহিদা ২০ দশমিক ৫৬ লাখ টন হলেও এর বিপরীতে দেশীয়ভাবে উৎপাদন হয়েছে ১১ লাখ টন। চাহিদার বাকি অংশ অবৈধভাবে পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার বাংলাদেশে প্রবেশ করতো। এর মাধ্যমেই মূলত দেশের বার্ষিক লবণের চাহিদা পূরণ হতো। কিন্ত সম্প্রতি মিয়ানমারের রুহিঙ্গা সমস্যার ফলে সিমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার হওয়ায় মিয়ানমারের উৎপাদিত অপরিশোধিত লবণ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে না। ফলে দেশীয় উৎপাদিত লবণ ও যোগানের মধ্যে অসমতা দেখা দেয়। ফলশ্রুতিতে দেশীয় লবণ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অপরিশোধীত লবণের প্রতি কেজি ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছে। লবনের চাহিদা পূরণের স্বার্থে গত ৫ জুন সরকার লবণ প্রতি মিল মালিককে বার্ষিক দশ হাজার মেট্রিক টন লবন আমদানি অনুমতি দেয়।
কিন্ত লবণ আমদানির এলসি রির্পোটে দেখা যায়, সরকার লবন আমদানি অনুমোদনের দুই মাসের মধ্যে ১৮টি প্রতিষ্ঠান বার্ষিক লক্ষমাত্রার পুরোটাই আমদানি করে নিচ্ছেন। প্রতিটি কোম্পানির দশ হাজার টন করে মোট এক লাখ ৮০ হাজার টন লবন আমদানির করছে, যা গত আগস্টে শিপমেন্ট হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
লবন ব্যবসায়ীদের কারসাজি ঠেকাতে
পারেনি বাণিজ্যমন্ত্রণালয়
লবন ব্যবসায়ীদের কারসাজি ঠেকাতে পারেনি বাণিজ্যমন্ত্রণালয়। পরে বাধ্য হয়ে অনুমোদন দিয়েছেন আমদানি। মাঠ পর্যায়ে লবনের উৎপাদন খরচ আট টাকা হলেও তা বিক্রি করা হচ্ছে ত্রিশ থেকে পয়েত্রিশ টাকা। এটি বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য। আর ট্যারিফ কমিশন বলছে, দেশের যে প্রতিষ্ঠানগুলো লবন উৎপাদন করছে তারা তাদের স্বক্ষমতার পঞ্চাশ শতাংশও ব্যবহার করছে না। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় লবনের দাম বাড়ছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব গোলাম হোসেন বলেন, রমজানে অযৌক্তিকভাবে ব্যবসায়ীরা লবণের দাম বাড়িয়েছে। বর্তমানে জনগণের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে লবণ বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা তুলনায় বেশি লবণ আমদানি করা হয়েছে। রমজানের আগে শিল্প মন্ত্রণালয় ও লবণ উৎপাদনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে লবণ আমদানি উন্মুক্ত করা হয়।
তিনি বলেন, লবণ নিয়ে আমরা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। অন্যান্য পণ্যগুলো মনিটরিং করতে পারলেও লবণের ক্ষেত্রে তা হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতি কেজি লবণের দাম ২০ টাকা ওপরে কোনোভাইে হতে পারে না। প্রতিকেজি লবণ আমদানি করতে খরচ হয় ২ দশমিক ৮০ টাকা। প্রক্রিয়াজাত করতে মোট খরচ হতে পারে ৭ থেকে ৮ টাকা। মুনাফাসহ প্রতিকেজি ১৯ থেকে ২০ টাকা উপরে মূল্য হওয়ার কোনো যুক্তিকতা নেই। কিন্তু ব্যবসায়ীরা প্রতিকেজি লবণ ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি করছে। এ বিষয়ে গত রোববার লবণ মিল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে লবণের মূল্য কমানোর আহ্বান জানানো হলে ব্যবসায়ীরা সরকারকে দাম কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে ট্যারিফ কমিশনের তথ্য কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, ২০১২ সালে আন্ত:মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে মোট ১৫ কোটি ৬৯ লাখ মানুষের দৈনিক ১৭ গ্রাম লবণ হিসাবে বছরে ভোজ্য লবণের চাহিদা ধরা হয় ৯ দশমিক ৩০ লাখ টন। কিন্তু এর সঙ্গে শিল্পের কাঁচামাল ও গবাদী পশুর খাদ্য বাদ পড়ায় নতুন করে পরিসংখ্যান করা হয়। এতে দেখা যায়, বছরে লবনের চাহিদা রয়েছে ২০ লাখ ৫৬ হাজার টন।
তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে অপরিশোধিত লবন ভোগের জন্য ব্যবহার করা হয় ১৫ দশমিক ৪৫ লাখ মেট্রিক টন যা মোট চাহিদার ৭৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। এছাড়া শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ২ দশমিক ৮৪ লাখ মেট্রিক টন এবং হাস, মুরগী, মৎস ও গবাদি পশুর খাবারে ব্যবহৃত হয় ২ দশমিক ২৭ লাখ টন।
বর্তমানে যে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিশোধিত লবন উৎপাদন করে তারা মোট চাহিদার ৫০ শতাংশও উৎপাদন করে না। ট্যারিফ কমিশনের এক তথ্যে দেখা যায়, এসিআই সল্টের মাসিক লবন উৎপাাদন ক্ষমতা ১৩ হাজার ২০০ টন কিন্ত প্রতি মাসে কোম্পানিটি উৎপাদন করছে মাত্র চার হাজার টন। কনফিডেন্স ব্যান্ডের মাসিক উৎপাদন ক্ষমতা ছয় হাজার টন। বিপরীতে মাসে উৎপাদন হচ্ছে চার হাজার টন। মোল্লা, ফ্রেস, পূবালী, ইফাদ এবং মধুমিতা ব্র্যান্ডের মাসিক উৎপাদন ক্ষমতা নয় হাজার থেকে ছয় হাজার টন হলেও এদের কেউ-ই মাসে চার হাজার টনের বেশি উৎপাদন করে না।
সম্প্রতি লবনের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসাবে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তথ্যে বলা হয়েছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে অপরিশোধিত লবনের চাহিদা ২০ দশমিক ৫৬ লাখ টন হলেও এর বিপরীতে দেশীয়ভাবে উৎপাদন হয়েছে ১১ লাখ টন। চাহিদার বাকি অংশ অবৈধভাবে পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার বাংলাদেশে প্রবেশ করতো। এর মাধ্যমেই মূলত দেশের বার্ষিক লবণের চাহিদা পূরণ হতো। কিন্ত সম্প্রতি মিয়ানমারের রুহিঙ্গা সমস্যার ফলে সিমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার হওয়ায় মিয়ানমারের উৎপাদিত অপরিশোধিত লবণ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে না। ফলে দেশীয় উৎপাদিত লবণ ও যোগানের মধ্যে অসমতা দেখা দেয়। ফলশ্রুতিতে দেশীয় লবণ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অপরিশোধীত লবণের প্রতি কেজি ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছে। লবনের চাহিদা পূরণের স্বার্থে গত ৫ জুন সরকার লবণ প্রতি মিল মালিককে বার্ষিক দশ হাজার মেট্রিক টন লবন আমদানি অনুমতি দেয়।
কিন্ত লবণ আমদানির এলসি রির্পোটে দেখা যায়, সরকার লবন আমদানি অনুমোদনের দুই মাসের মধ্যে ১৮টি প্রতিষ্ঠান বার্ষিক লক্ষমাত্রার পুরোটাই আমদানি করে নিচ্ছেন। প্রতিটি কোম্পানির দশ হাজার টন করে মোট এক লাখ ৮০ হাজার টন লবন আমদানির করছে, যা গত আগস্টে শিপমেন্ট হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment