Saturday, October 19, 2013

পিই অনুপাত বিবেচনায় বিনিয়োগেও লোকসানে বিনিয়োগকারীরা

সাখাওয়াত হোসেন
পুঁজিবাজারে কখন কোন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে তা পরিমাপ করা হয় কোম্পনির পিই অনুপাতের মাধ্যমে। এই অনুপাতে কোম্পানির আয় বাড়লে পিই রেশিও স্বাভাবিকভাবেই কমতে থাকে। ফলে কখন কোন কোম্পানির শেয়ার ক্রয় ঝুকিমুক্ত তাও পরিমাপ করা হয় এই পিই অনুপাতে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাও সময় সময় বিনিয়োগকারীদের ঝুকির কথা বিবেচনা করে পিই অনুপাতের ভিত্তিতে মার্জিন লোনের সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে। কিন্ত বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে যেসব খাতের পিই রেশিও কম সেইসব কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ে করেও মুনাফা তুলতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা। বরং প্রতিনিয়তই কমে আসছে সেইসব কোম্পানির শেয়ারের দাম।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কোম্পানির পিই রেশিও ঝুকিমুক্ত এমন শতাধিক কোম্পানির শেয়ারের দাম গত একমাসে কমেছে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। অথচ যেসব কোম্পানির শেয়ারের পিই রেশিও একশ বা তারও বেশি সেইসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে হু হু করে।
ডিএসই প্রেসিডেন্ট আহসানুল ইসলাম  বলেন, কোম্পানির পিই মূলত কোম্পানির দক্ষতা ও উৎপাদনের উপর নির্ভর করে। কোম্পানিটি আগামীতে কি অবস্থায় থাকবে বা বর্তমানে কি অবস্থায় আছে তাই এই সূচকের মাধ্যমে নির্ধারন করা যায়। কোম্পানির আয় বাড়লে পিই রেশিও স্বাভাবিকভাবেই কমে আসবে। আর এজন্য এই পিই যে কোম্পানির যত কম হবে সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগের ঝুকি তত কম।
তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে অনেকগুলো দুর্বল কোম্পানি ও যেসব কোম্পানির পিই অনুপাত অনেক বেশি সেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে। ইতোমধ্যে সেইসব কোম্পানির বিরোদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার পাশাপাশি ডিএসইও তদন্ত পরিচালনা করছে।
এ বিষয়ে বাজার বিশ্লেষক আবু আহম্মেদ বলেন, বাজারের গড় পিই ভালো থাকলেই হবে না, বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার ক্ষমতা থাকতে হবে। বিনিয়োগকারীদের যখন শেয়ার কেনার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে তখন স্বাভাবিকভাবেই  বাজার চাঙ্গাভাব ফিরে আসবে। এছাড়া বিনিয়োগের পর পুঁজিবাজার থেকে যদি বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলতে না পারে সেই ক্ষেত্রেও বিনিয়োগে ভাটা আসতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকেও অনেক দায়িত্ব আছে। ব্যাংকের সঙ্গে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর বিনিয়োগ বান্ধব না হলে বড় বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিনিয়োগ করবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী কোম্পানির শেয়ারের পিই ২০ শতাংশের বেশি হলে সেই কোম্পানির শেয়ারকে অতিমূল্যায়িত বলা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষপটে পিই ৩০ এর নিচে থাকা কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগে ঝুঁকিমুক্ত বলা হয়।
পুঁজিবাজারের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মৌল ভিত্তিক কোম্পানির “এ” ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত ২০২ টি কোম্পানির গড় পিই অনুপাত ১৬.১৬ শতাংশ। “বি” ক্যাটাগরির ২২টি কোম্পানির গড় পিই ২৩.২৭ শতাংশ। “জেড” ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত ১৭টি কোম্পানির গড় পিই ২৯.৬৩ শতাংশ। “এন” ক্যাটারিতে তালিকাভুক্ত ৫টি কোম্পানির গড় পিই ২০.৬৫ শতাংশ। এছাড়া খাত ভিত্তিক বিবেচনায় পুঁজিবাজারের সবচেয়ে মৌল ভিত্তিক বিবেচনা করা হয় ব্যাংকিং খাততে। বর্তমানে এই খাতে তালিকাভুক্ত ৩০টি কোম্পানির গড় পিই ১৩.১০ শতাংশ। নন ব্যাংকিং আর্থিক ২৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গড় পিই ১৮.০৬ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি পিই রয়েছে পেপার ও প্রিন্টিং খাতের কোম্পানিগুলোর। যার গড় পিই ৩৭.০৬ শতাংশ।
তবে পুঁজিবাজারে মৌলভিত্তিক কোম্পানির গুলোর মধ্যে ব্যাংকিং খাতের প্রায় ১০টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বর্তমানে অভিহিত মূল্যের সমান। আর কয়েকটির দাম অভিহিত মূল্যের নীচে নেমে গেছে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, পিই অনুপাত বিবেচনা করেও বাজারে বিনিয়োগ ঝুকিপূর্ন। এটি নিশ্চিত করা দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থার। ঝুকিপূর্ণ যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম ক্রমাগত বাড়ছে সেগুলোর বিষয়ে দ্রুত তদন্ত করে শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।
শেয়ারবাজারে গুরুত্বপূর্ন পরিমাপক হচ্ছে পিই অনুপাত । সময় সময় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) নির্দেশে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো কোম্পানির পিই হিসাবে মার্জিন ঋণ প্রদান করে থাকে।  পিই অনুপাতের পূর্ণ রূপ হলো বাজার মূল্য ও আয়ের অনুপাত । অর্থাৎ, কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ও শেয়ারের বর্তমান বাজার মূল্যের অনুপাত।
প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানি নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ মুনাফা অর্জন করেছে তাই শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস। আর বাজারমূল্য হলো শেয়ারবাজারে ওই কোম্পানির শেয়ারের বর্তমান দর। শেয়ারটির প্রকৃত আয়ের তুলনায় কত বেশি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে তা হিসাব করা হয় পিই অনুপাতের মাধ্যমে । শুধু তাই নয়, নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে ঝুঁকি নির্ণয়ে পিই অনুপাতই সবচেয়ে কার্যকর মাপকাঠি।
পিই অনুপাত নির্ণয় করতে হলে শেয়ারের বর্তমান বাজার দরকে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দিয়ে ভাগ করতে হবে। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারী তার ক্রয়কৃত শেয়ারের ভবিষ্যৎ আয়ের মতো ও কত লভ্যাংশ আসতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। প্রতিদিন শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দর ওঠানামার সঙ্গে সঙ্গে পিই অনুপাতও হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। তাই প্রতিদিনই শেয়ার কেনার আগে ওই কোম্পানির সেদিনকার পিই অনুপাত জেনে নেয়া ভালো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ###

No comments: