সাখাওয়াত হোসেন সুমন:
রাষ্ট্রীয়ত্ব লোকসানী, বন্ধ প্রতিষ্ঠান চালু করতে গত সাড়ে তিন বছরে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের অর্জন শূন্য। এই সময়ে কোন প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরনের জন্য তালিকাভুক্ত হয়নি। আর যে চারটি প্রতিষ্ঠান বেসরকারীখাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে তাও আগের সরকার প্রচেষ্টার সুফল। বেসরকারীকরনের তালিকায় থাকা ২৫টি প্রতিষ্ঠান এখনও আলোর মুখ দেখেনি। এই সময়ে অর্জন শুধু লীজ নীতিমালা তৈরি আর কমিশনের আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ। বাকি সময় অতিবাহিত হয়েছে দরপত্র আহবান, সমীক্ষা প্রস্তুত, পত্র পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে।
তবে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মির্জা আবদুল জলিল ব্যর্থতা স্বীকার করতে নারাজ। তিনি বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে বন্ধ কারখানা চালু করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু নানামুখী বাধা আর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর বাধার কারনে কাঙ্খিত সফলতা পাওয়া যায়নি।
তিনি উল্টো প্রশ্ন ছোড়ে দেন, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়াকে জিজ্ঞাস করেন কেন আমি তাদের সঙ্গে এক ঝগড়া করেছি। তাদের নিকট বারবার পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় অর্থনীতিকে সক্রিয় করা। বন্ধ আর লোকসানী প্রতিষ্ঠান ধরে রেখে রাষ্ট্রের কোনো লাভ নেই। বরং তা বেসরকারী খাতে ছেড়ে দিলে একদিনে যেমন সরকারের আয়ের পথ তৈরি হবে অন্যদিকে কর্মসংস্থান ও জিডিপিতে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানের অবদান বাড়বে।
জানা গেছে, বর্তমান সরকারের সাড়ে তিন বছরে কমিশনে কোনো প্রতিষ্ঠানই বেসকারীকরনের জন্য তালিকাভুক্ত হয়নি। কমিশনের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়নি তেমন কোনো বিশেষ উদ্যোগ। ফলে এই সময়ে পূর্বের তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারীখাতে ছাড়ার জন্য দরপত্র আহবান, মামলা নিস্পত্তি আর আটকে থাকা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সমাধানে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে কমিশন।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নানামুখী জটিলতায় রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরনে ন্যস্ত এই প্রতিষ্ঠানটি এখন প্রায় অকার্যকর। বেশ কিছু ভালো উদ্যোগ নিলেও আইনটি জটিলতা আর চিহিৃত কিছু মন্ত্রণালয়ের বাধার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ব বন্ধ ও লোকসানী প্রতিষ্ঠান জাতীয় অর্থনীতিতে যুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
আর শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া বলেছেন, বেসরকারী খাতে আগে অনেক প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এগুলো থেকে কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। এজন্য শিল্পমন্ত্রণালয়ের হাতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মন্ত্রণালয়ের আওতায় কিভাবে চালু করা যায় তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ন্যাশনাল সুগার মিল ও দেশবন্ধু সুগার মিল সম্পর্কে তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে কাজ চলছে। যাচাই-বাছাই করে শিল্প দুটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরনের সর্বশেষ পর্যায় সম্পন্ন হওয়ার পরও ক্রেতার নিকট হস্তান্তর না করারও নজির রয়েছে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের। এগুলোর মধ্যে শিল্পমন্ত্রণালয়ের বাধার কারণে হস্তান্তর প্রক্রিয়া আটকে আছে ন্যাশনাল সুগার মিল ও দেশবন্ধু সুগার মিল। আর শিল্প মন্ত্রণালয় নিজেদের ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানার জোরে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরী। বিপুল দায়-দেনা সম্বলিত মিলটি এখন মন্ত্রণালয় চালু করতে পারছে না। অপরদিকে বেসরকারী উদ্যোক্তাকে তা চালুর কার্যকর সুযোগ দিচ্ছে না। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের কারণে আটকে আছে হাফিজ টেক্সটাইল মিল।
ন্যাশনাল সুগার মিল বেসরকারীকরনে কমিশনকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত আলোচনা করতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি সমাধানে অর্থমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিলে অর্থমন্ত্রী ক্রেতার নিকট ন্যাশনাল সুগার মিল হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়। কিন্তু শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাধার কারণে তা এখন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
একই অবস্থা হাফিস টেক্সটাইল মিলের ক্ষেত্রে। মিলটির বিপরীতে যাবতীয় পাওনা আদায়ের পর এটির সাব-কবলা দলিল সম্পাদনের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হলে মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ ক্রেতার বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ এনে সাব-কবলা দলিল সম্পাদনে অস্বীকার করে। এ নিয়ে ক্রেতা আদালতে রীট পিটিশন করে। দুই বছর অতিক্রম হলেও এখন তা সমাধানে ক্রেতাই আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের চিত্র আরও হতাশাব্যাঞ্জক। সরকার ক্ষমতায় আসার পর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৫ বছর মেয়াদী দেয়া ৫টি পাটকলের লীজ বাতিল করে দেয়ায় বিপাকে পড়েন বেসরকারী উদ্যোক্তারা। সম্প্রতি চট্টগ্রামের ফুরাত কর্ণফুলী কার্পেট ফ্যাক্টরী ও কর্ণফুলী জুট মিলের লীজ হঠাৎ করে বাতিল করে দিয়ে উদ্যোক্তাকে সংকটে ফেলে দেয়া হয়। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় প্রাইভেটাইজেশন কমিশনকে বেসরকারীকরণ করতে না দিলেও নিজেরা বেসরকারীকরণের মাধ্যমে মিল বিক্রির প্রস্তাব আনেন । অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি তা বাতিল করে দিয়েছে । অতঃপর তারা মেয়াদউত্তীর্ণ পর্যাপ্ত জনবলহীন লিকুইডিশন সেলের মাধ্যমে মিল বিক্রির দিকে ধাবিত হচ্ছেন । মনোয়ার জুট মিল নিজেরা বিক্রয়ের পরও হস্তান্তর সম্পন্ন করতে পারছেন না ।
কোনো প্রতিষ্ঠান যখন বেসরকারীকরণের জন্য তালিকাভুক্ত হয় তখন প্রথমেই তার মূল্য নির্ধারণ করা হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে মূল্য নির্ধারণ করার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা কর্পোরেশন নির্ধারিত মূল্য অযৌক্তিক দাবী করে প্রক্রিয়াকে দীর্ঘয়িত করে। একটি প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরনে কমপক্ষে চারমাস প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে হয়। অনেক সময় প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সেই প্রতিষ্ঠান তালিকা থেকে তুলে নেয়। ফলে আটকে যায় কমিশনের নিয়মিত কার্যক্রম। সাড়ে তিন বছরে কোন প্রতিষ্ঠানই প্রথমবার দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোর জন্য ১০ বারের অধিক সময় দরপত্র আহবান করতে হয়ছে।
সম্প্রতি মাগুরা টেক্সটাইল মিল ও রাঙ্গামাটি টেক্সটাইল মিল বিক্রির প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পাঠানো হলে বিদ্যু বিভাগ মাগুরা টেক্সটাইল মিলে বিদ্যু কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। বিপরীতে মিলটি বিদুৎ বিভাগের নিকট ফেরত দিতে বলা হলে আইনগত ভাবে বেসরকারিকরনের তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠান ফেরত দেয়া সম্ভব নয় বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ফলে এ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন জটিলতা।
এ বিষয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এটা এক ধরনের জোরচুরি। দরপত্র আহবানের পর ক্রেতার নিকট বিক্রির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছানোর পর এখন সেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব অযৌক্তিক। এভাবে কমিশন চলতে পারে না।
এই সময়ে কমিশনের সফলতার তালিকায় থাকা দুটি উদ্যোগও এখন ভেস্তে যেতে বসেছে। রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান বিক্রি না করে লীজ দেয়ার যে উদ্যেগের খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। এ সংক্রান্ত কমিটির আহবায়ক ড. মসিউর রহমান ছুটিতে থাকায় সরকার কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব দিয়েছেন বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. এস. এ সামাদকে। এই মধ্যে কমিটির সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। তবে কমিটির কার্যক্রমের জন্য আরো তিন মাস সময় বর্ধিত করার প্রস্তাব রয়েছে। এরই মধ্যে অতিরিক্ত জমি লীজের তালিকায় থাকায় বেশ কিছু কর্পোরেশন জানিয়ে দিয়েছে তাদের নিকট কোন অতিরিক্ত জমি নেই। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্পোরেশনের অনীহার কারণে শেষ পর্যন্ত কমিশনের এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন নাও হতে পারে। আর কমিশনের আইন পরিবর্তনের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার সুফল বর্তমান সরকারের আমলে বাস্তবায়ন হওয়া নিয়েও আশংকা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
রাষ্ট্রীয়ত্ব লোকসানী, বন্ধ প্রতিষ্ঠান চালু করতে গত সাড়ে তিন বছরে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের অর্জন শূন্য। এই সময়ে কোন প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরনের জন্য তালিকাভুক্ত হয়নি। আর যে চারটি প্রতিষ্ঠান বেসরকারীখাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে তাও আগের সরকার প্রচেষ্টার সুফল। বেসরকারীকরনের তালিকায় থাকা ২৫টি প্রতিষ্ঠান এখনও আলোর মুখ দেখেনি। এই সময়ে অর্জন শুধু লীজ নীতিমালা তৈরি আর কমিশনের আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ। বাকি সময় অতিবাহিত হয়েছে দরপত্র আহবান, সমীক্ষা প্রস্তুত, পত্র পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে।
তবে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মির্জা আবদুল জলিল ব্যর্থতা স্বীকার করতে নারাজ। তিনি বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে বন্ধ কারখানা চালু করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু নানামুখী বাধা আর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর বাধার কারনে কাঙ্খিত সফলতা পাওয়া যায়নি।
তিনি উল্টো প্রশ্ন ছোড়ে দেন, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়াকে জিজ্ঞাস করেন কেন আমি তাদের সঙ্গে এক ঝগড়া করেছি। তাদের নিকট বারবার পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় অর্থনীতিকে সক্রিয় করা। বন্ধ আর লোকসানী প্রতিষ্ঠান ধরে রেখে রাষ্ট্রের কোনো লাভ নেই। বরং তা বেসরকারী খাতে ছেড়ে দিলে একদিনে যেমন সরকারের আয়ের পথ তৈরি হবে অন্যদিকে কর্মসংস্থান ও জিডিপিতে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানের অবদান বাড়বে।
জানা গেছে, বর্তমান সরকারের সাড়ে তিন বছরে কমিশনে কোনো প্রতিষ্ঠানই বেসকারীকরনের জন্য তালিকাভুক্ত হয়নি। কমিশনের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়নি তেমন কোনো বিশেষ উদ্যোগ। ফলে এই সময়ে পূর্বের তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারীখাতে ছাড়ার জন্য দরপত্র আহবান, মামলা নিস্পত্তি আর আটকে থাকা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সমাধানে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে কমিশন।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নানামুখী জটিলতায় রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরনে ন্যস্ত এই প্রতিষ্ঠানটি এখন প্রায় অকার্যকর। বেশ কিছু ভালো উদ্যোগ নিলেও আইনটি জটিলতা আর চিহিৃত কিছু মন্ত্রণালয়ের বাধার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ব বন্ধ ও লোকসানী প্রতিষ্ঠান জাতীয় অর্থনীতিতে যুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
আর শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া বলেছেন, বেসরকারী খাতে আগে অনেক প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এগুলো থেকে কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। এজন্য শিল্পমন্ত্রণালয়ের হাতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মন্ত্রণালয়ের আওতায় কিভাবে চালু করা যায় তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ন্যাশনাল সুগার মিল ও দেশবন্ধু সুগার মিল সম্পর্কে তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে কাজ চলছে। যাচাই-বাছাই করে শিল্প দুটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরনের সর্বশেষ পর্যায় সম্পন্ন হওয়ার পরও ক্রেতার নিকট হস্তান্তর না করারও নজির রয়েছে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের। এগুলোর মধ্যে শিল্পমন্ত্রণালয়ের বাধার কারণে হস্তান্তর প্রক্রিয়া আটকে আছে ন্যাশনাল সুগার মিল ও দেশবন্ধু সুগার মিল। আর শিল্প মন্ত্রণালয় নিজেদের ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানার জোরে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরী। বিপুল দায়-দেনা সম্বলিত মিলটি এখন মন্ত্রণালয় চালু করতে পারছে না। অপরদিকে বেসরকারী উদ্যোক্তাকে তা চালুর কার্যকর সুযোগ দিচ্ছে না। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের কারণে আটকে আছে হাফিজ টেক্সটাইল মিল।
ন্যাশনাল সুগার মিল বেসরকারীকরনে কমিশনকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত আলোচনা করতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি সমাধানে অর্থমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিলে অর্থমন্ত্রী ক্রেতার নিকট ন্যাশনাল সুগার মিল হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়। কিন্তু শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাধার কারণে তা এখন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
একই অবস্থা হাফিস টেক্সটাইল মিলের ক্ষেত্রে। মিলটির বিপরীতে যাবতীয় পাওনা আদায়ের পর এটির সাব-কবলা দলিল সম্পাদনের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হলে মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ ক্রেতার বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ এনে সাব-কবলা দলিল সম্পাদনে অস্বীকার করে। এ নিয়ে ক্রেতা আদালতে রীট পিটিশন করে। দুই বছর অতিক্রম হলেও এখন তা সমাধানে ক্রেতাই আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের চিত্র আরও হতাশাব্যাঞ্জক। সরকার ক্ষমতায় আসার পর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৫ বছর মেয়াদী দেয়া ৫টি পাটকলের লীজ বাতিল করে দেয়ায় বিপাকে পড়েন বেসরকারী উদ্যোক্তারা। সম্প্রতি চট্টগ্রামের ফুরাত কর্ণফুলী কার্পেট ফ্যাক্টরী ও কর্ণফুলী জুট মিলের লীজ হঠাৎ করে বাতিল করে দিয়ে উদ্যোক্তাকে সংকটে ফেলে দেয়া হয়। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় প্রাইভেটাইজেশন কমিশনকে বেসরকারীকরণ করতে না দিলেও নিজেরা বেসরকারীকরণের মাধ্যমে মিল বিক্রির প্রস্তাব আনেন । অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি তা বাতিল করে দিয়েছে । অতঃপর তারা মেয়াদউত্তীর্ণ পর্যাপ্ত জনবলহীন লিকুইডিশন সেলের মাধ্যমে মিল বিক্রির দিকে ধাবিত হচ্ছেন । মনোয়ার জুট মিল নিজেরা বিক্রয়ের পরও হস্তান্তর সম্পন্ন করতে পারছেন না ।
কোনো প্রতিষ্ঠান যখন বেসরকারীকরণের জন্য তালিকাভুক্ত হয় তখন প্রথমেই তার মূল্য নির্ধারণ করা হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে মূল্য নির্ধারণ করার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা কর্পোরেশন নির্ধারিত মূল্য অযৌক্তিক দাবী করে প্রক্রিয়াকে দীর্ঘয়িত করে। একটি প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরনে কমপক্ষে চারমাস প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে হয়। অনেক সময় প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সেই প্রতিষ্ঠান তালিকা থেকে তুলে নেয়। ফলে আটকে যায় কমিশনের নিয়মিত কার্যক্রম। সাড়ে তিন বছরে কোন প্রতিষ্ঠানই প্রথমবার দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোর জন্য ১০ বারের অধিক সময় দরপত্র আহবান করতে হয়ছে।
সম্প্রতি মাগুরা টেক্সটাইল মিল ও রাঙ্গামাটি টেক্সটাইল মিল বিক্রির প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পাঠানো হলে বিদ্যু বিভাগ মাগুরা টেক্সটাইল মিলে বিদ্যু কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। বিপরীতে মিলটি বিদুৎ বিভাগের নিকট ফেরত দিতে বলা হলে আইনগত ভাবে বেসরকারিকরনের তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠান ফেরত দেয়া সম্ভব নয় বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ফলে এ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন জটিলতা।
এ বিষয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এটা এক ধরনের জোরচুরি। দরপত্র আহবানের পর ক্রেতার নিকট বিক্রির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছানোর পর এখন সেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব অযৌক্তিক। এভাবে কমিশন চলতে পারে না।
এই সময়ে কমিশনের সফলতার তালিকায় থাকা দুটি উদ্যোগও এখন ভেস্তে যেতে বসেছে। রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান বিক্রি না করে লীজ দেয়ার যে উদ্যেগের খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। এ সংক্রান্ত কমিটির আহবায়ক ড. মসিউর রহমান ছুটিতে থাকায় সরকার কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব দিয়েছেন বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. এস. এ সামাদকে। এই মধ্যে কমিটির সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। তবে কমিটির কার্যক্রমের জন্য আরো তিন মাস সময় বর্ধিত করার প্রস্তাব রয়েছে। এরই মধ্যে অতিরিক্ত জমি লীজের তালিকায় থাকায় বেশ কিছু কর্পোরেশন জানিয়ে দিয়েছে তাদের নিকট কোন অতিরিক্ত জমি নেই। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্পোরেশনের অনীহার কারণে শেষ পর্যন্ত কমিশনের এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন নাও হতে পারে। আর কমিশনের আইন পরিবর্তনের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার সুফল বর্তমান সরকারের আমলে বাস্তবায়ন হওয়া নিয়েও আশংকা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
No comments:
Post a Comment