Sunday, October 13, 2013


দেশীয় ব্র্যান্ডের নকল মোড়কে সয়লাব বাজার
হুমকির মুখে ৮শ কোটি টাকার লবণ শিল্প


দেশীয় ব্র্যান্ডের লবণের মোড়ক নকল করে প্রতারণায় নেমেছে একটি চক্র। নকল মোড়কের লবনের পাইকারী দাম কম হওয়ায় আসল ব্র্যান্ডের লবণ কিনছে না বিক্রেতারা। এতে হুমকির মধ্যে পড়েছে দেশীয় প্রায় আটশ কোটি টাকার লবণ শিল্প। সম্প্রতি ট্যারিফ কমিশনের এমন অভিযোগ করেছে কয়েকটি দেশীয় লবণ প্রস্তুতকারক।
জানা গেছে, কনফিডেন্স সল্ডের মোড়ক নকল করে বাজারজাত করা হচ্ছে কনফিডেন্স ফাইন চয়েস, এসিআই মোড়ক নকল করে আইসিএল সল্ট নামে বাজারজাত করা হচ্ছে। দেশীয় আরেকটি ব্র্যান্ড নকল করে বাজারজাত করা হচ্ছে গ্লোবাল সুপার হোয়াইট সল্ট নামে। এছাড়া বাজাজ প্রোডাক্ট নামে লবণ বাজারজাত করা হচ্ছে ইন্ডিয়ান একটি ব্র্যান্ড। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের বাজারে বাজাজ ব্র্যান্ড লবন সরবরাহ করছে না। কোনো অসাধু চক্র বাজাজ ব্র্যান্ডকে অবৈধভাবে ব্যবহার করছে। 
সম্প্রতি ট্যারিফ কমিশনে দেশীয় লবণ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অভিযোগ করেছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী তাদের লবণের মোড়ক নকল করে নিম্মমানের লবণ বাজারজাত করছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে দেশীয় লবণ শিল্প। যেসব ব্যবসায়ী এ ধরনের কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের বিরোদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে, কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে এমন অভিযোগের পর বাজারে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। সেই প্রেক্ষিতে নকল মোড়কের গায়ে যে ঠিকানা লেখা আছে সেখানে কমিশনের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্ত প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্থিস্ত পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, সরকার গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অপরিশোধিত লবণ আমদানির সুযোগ প্রদান করে। এ সময় প্রায় সাড়ে সাত লাখ টন লবণ আমদানি করা হয়। লবণের প্রতি কেজির দাম পরেছে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ টাকা। আমদানিকারকরা লবন আমদানি করে  বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেছে। মূলত সেই সময় যেসব প্রতিষ্ঠান আমদানিকারকদের কাছ থেকে লবণ কিনেছে তারাই এখন দেশীয় ব্র্যান্ডের মোড়ক নকল করে নিম্ম মানের লবণ বাজারজাত করছে।
গতকাল কারওয়ান বাজারে বেশ কিছু দোকানে কনফিডেন্স ব্র্যান্ডের নকল মোড়ক পাওয়া গেছে। যদিও বিক্রেতারা জানালেন, লবণ একই। কিন্ত কনফিডেন্স সল্ট তৈরি হয় ভ্যাকাম ইভাপোরেটেড পদ্ধতিতে। নকল মোড়কে এ ধরনের কোনো তথ্য না থাকার বিষয়টি বিক্রেতার নজরে দেয়া হলে তিনি বলেন, দুটিই কনফিডেন্স ব্যান্ডের লবণ।
ট্যারিফ কমিশনের গবেষনা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, বাণিজ্যমন্ত্রণালয়কে ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে লবণ আমদানির সুযোগ প্রদানের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্ত সরকারে তা না মেনে বছরের যে কোনো সময় লবণ আমদানির সুযোগ দিচ্ছে। এতে দেশীয় শিল্প হুমকির মধ্যে পড়ছে।
ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে অপরিশোধিত লবণ ভোগের জন্য ব্যবহার করা হয় ১৫ লাখ ৪৫ হাজার টন যা মোট চাহিদার ৭৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। এছাড়া শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ২ লাখ  ৮৪ হাজার টন এবং হাস, মুরগী, মৎস ও গবাদি পশুর খাবারে ব্যবহৃত হয় ২ লাখ ২৭ লাখ টন।
মাহমুদ হাসান বলেন, দেশী বর্তমানে দুটি উল্লেখযোগ্য পদ্ধতিতে লবন পরিশোধিত হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছে ভ্যাকাম ইভাপোরেটেড, মেকানিক্যাল ওয়াস। বর্তমানে সময়ে ভ্যাকাম ইভাপোরেটড পদ্ধিতিতে যেসব লবণ উৎপাদন হচ্ছে তার কেজি হতে পারে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা এবং মেকানিক্যাল ওয়াস পদ্ধিতির ক্ষেত্রে দাম হওয়া উচিত ১২ থেকে ১৩ টাকা। কিন্তু বাজারে উন্নত মানের লবণের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা এবং মাধ্যম মানের লবণের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৮ টাকা।
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ভ্যাকাম ইভাপোরেটেড পদ্ধতিতে এসিআই সল্ট, কনফিডেন্স সল্ট এবং মোল্লা সল্ট মাসে ১২ হাজার টন উৎপাদন করছে। আর মেকানিক্যাল ওয়াস পদ্ধতিতে ফ্রেস, পূবালী, ইফাদ, মধুমতি সল্ট মাসে ১০ হাজার টন উৎপাদন করছে। 
এ বিষয়ে কনফিডেন্স সল্ট লিমিটেডের আন্তর্জাতিক ক্রয় বিভাগের সামীর বড়–য়া বলেন, বাজারে আমাদের ব্র্যান্ডের লবণের মোড়ক নকল করে নিম্ম মানের লবণ বাজারজাত করছে এক শ্রেণী অসাধু ব্যবসায়ী। একই সঙ্গে তারা বাজারে পুশ সলে করছে। বিক্রেতাদের নিকট ৫০০শ গ্রামের কনফিডেন্স সল্টরের পাইকারী দাম ১০ থেকে ১২ টাকা। কিন্ত মোড়ক নকল করে অসাধু ব্যবসায়ীরা সেই একই লবণ বিক্রেতাদের নিকট বিক্রি করছে ৭ থেকে ৮ টাকায়। এতে করে মূলত আমাদের লবন শিল্প হুমকির মধ্যে পড়ছে।
তিনি বলেন, কনফিডেন্স সল্ট লিমিটেড বর্তমানে দেশে সবচেয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে লবণ পরিশোধন করে বাজারজাত করছে। এ ধরনের একটি প্রকল্প স্থাপন করতে দেড় থেকে দুইশ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা আমাদের মোড়ক নকল করে আমদানিকৃত লবণ মোড়কজাত করে বাজারজাত করায় আমাদের ব্যবসা হুমকির মধ্যে পড়েছে। বিষয়টি নজরে এনে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগ পাঠানো হয়েছে।
ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে, বিষয়ে তারা পর্যবেক্ষন করছে। যেসব প্রতিষ্ঠান মোড়ক নকল করে লবণ বাজারজাত করছে তাদেরকে চিহিৃত করে নিজেদের ব্র্যান্ডে লবণ বাজারজাত করার সুযোগ প্রদান বা তা সম্ভব না হলে তাদের বিরোদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনে বানিজ্যমন্ত্রণালয়কে সুপারিশ পাঠানো হবে।  




No comments: