Sunday, July 1, 2012

রমজানে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকবে গার্মেন্টস

অর্থনীতি প্রতিবেদক : আসন্ন রমজানে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি থাকছে দেশের সব গার্মেন্টস শিল্প-কারখানায়। একই সঙ্গে নজরদারিতে থাকবেন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো। গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে বেতন-ভাতা ও ঈদ বোনাস নিয়ে যাতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য এবার আগে থেকেই সংশি¬ষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। 

ঈদের আগেই শ্রমিকদের বর্ধিত বেতন-ভাতা পরিশোধে সজাগ দৃষ্টি রাখতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থা সমূহ ও শিল্প পুলিশ ও গার্মেন্টস সংগঠনগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। 
সম্প্রতি আশুলিয়া ও কাঁচপুরের শ্রমিক বিক্ষোভে শ্রমিক অসন্তোষ কমেনি বলে মনে করছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। এ অবস্থায় আসন্ন রমজানে গার্মেন্টস শিল্পের সম্ভব অস্থিরতা মোকাবেলা করতেই এই ধরনের পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে বলে জানিয়েছে সংশি¬ষ্ট সূত্র।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রমজানে গার্মেন্টস শিল্প শ্রমিকদের বেতন সময়মত পরিশোধ করতে হবে। ওই প্রতিবেদনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসী চক্র ও দুস্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য পুলিশ, আনসার, সাদা পোষাকের পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়ন করা হবে। এবং মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোতে বিশেষ নজরদারীতে রাখার কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবছর রমজানে গার্মেন্টস কারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে অসন্তোষ দেখা যায়। এবার তা কিভাবে মোকাবেলা করা হবে এক প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন অর্থনীতি প্রতিদিনকে জানান, আমরা চেষ্টা করব ঈদের আগেই শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধ করতে। এ নিয়ে যেন কোন অপ্রীতিকার ঘটনার সৃষ্টি না হয় এজন্য বিজিএমইএ পক্ষ থেকেও নজরদারী করা হবে। তবে বিজিএমইএ সদস্য নয় এমন কারখানার দায়িত্ব আমরা নেব না। এজন্য সদস্যহীন গার্মেন্টস মালিকসহ বিজিএমইএ অন্তর্ভুক্ত মালিকদের অপ্রীতিকার ঘটনা যেন না ঘটে এজন্য শর্তক থাকতে অনুরোধ জানান তিনি। নজরদারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। 
গার্মেন্ট শ্রমিক সংগঠনগুলো ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ও মজুরি বোর্ড গঠন করে নূণ্যতম ৭ হাজার টাকা বেতন নির্ধারণের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে আমাদের ব্যবসা করতে হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এখন সব দেশেই প্রভাব ফেলেছে। একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ গ্যাস-বিদ্যুৎ সঙ্কট চরমে। তারপরও সরকার যদি শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে তা বাস্তবায়ন করতে চাই তবে তা নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। 
গার্মেন্ট শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো জানিয়েছে, বর্তমানে দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় যে হারে বেড়েছে তাতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবন চালানো দায়। শ্রমিকদের অভিযোগ অধিকাংশ কারখানাই নিয়মিত বেতন-ভাতা প্রদান করে না। ওভার টাইমের কথা বলে তা প্রদান করে না। গত কয়েক মাসে একাধিক বার আশুলিয়ায় বাড়ি ভাড়া বেড়েছে। এই অবস্থায় বর্তমানে প্রদত্ত মজুরিতে আন্দোলনেরর বিকল্প নেই। সমাধানের বিষয়ে তারা জানিয়েছেন, কারখানাভিত্তিক রেশন ব্যবস্থা চালুকরন, শ্রমিকদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কলোনী গড়ে তোলা, শ্রম আইন সংশোধন করে অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস আ্যন্ড ইন্ডাস্ট্রি ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আখতার বলেন, আমাদের দাবি কারখানার স্ব-স্ব মালিকরা ও সরকার আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরী বাস্তবায়ন করবে। আমরা সরকারের কাছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরী সাত হাজার টাকা নির্ধারণ করার সুপারিশ করেছি। তিনি বলেন, শ্রমিকরা কখনও কারো উস্কানীতে ধ্বংশাত্বক কার্যক্রম করে না। বরং শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ে আন্দোলন করে। তবে কোন একটি পক্ষ শ্রমিকদের আন্দোলনকে পুঁজি করে বিষয়টিকে ঘোলাটে করার চেষ্টা চালায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের কেন্দ্রের সভাপতি অ্যাড. মন্টু ঘোষ জানান, গার্মেন্টস মালিকদের উচিত হবে ঈদের আগেই শ্রমিকদের পাওনা বোঝিয়ে দেয়া। কিছু কিছু গার্মেন্ট মালিকদের অনৈতিক কার্যক্রমের কারণে ঈদের আগে বেতন-ভাতা নিয়ে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। ঈদের আগে শ্রমিকদের পাওনা বোঝিয়ে দিতে মালিকদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

No comments: