Wednesday, November 6, 2013

পুঁজিবাজারে আসছে ঋণ খেলাপীরা

*একমির চেয়ারম্যান ঋণ খেলাপি
*তালিকাভুক্ত না করতে অর্থমন্ত্রীর কাছে আল আরাফা ব্যাংকের চিঠি

সাখাওয়াত হোসেন
নতুন কোম্পানির নামে পুঁজিবাজারে আসছে ঋণ খেলাপীরা। আর এর সুযোগ করে দিচ্ছে খোদ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসতে চাওয়া দ্যা একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ঋণ খেলাপি বলে অর্থমন্ত্রীকে জানিয়েছে আল আরাফাহ ব্যাংক। ব্যাংকটি বলেছে, কোম্পানিটির চেয়ারম্যান এবং একজন শেয়ার হোল্ডার ঋণ খেলাপি হওয়ায় কোম্পানিটি যাতে পুঁজিবাজারে আইপিও মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করতে না পারে এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানিয়েছে। অর্থমন্ত্রী এর প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসিকে। তা সর্ত্বেও উক্ত কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য অনুমোদনের পক্রিয়া শুরু করেছে বিএসইসি।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আইপিওর মাধ্যমে যেসব কোম্পানিকে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দেয়া হয়, সেই সব কোম্পানির সব পরিচালক, স্পন্সর ডিরেক্টর ঋণ খেলাপী সহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরই আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়। এই কোম্পানির ক্ষেত্রেও তাই করা হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ্দ্যা একমি ল্যাবরেটরিজ সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না বলে জানান। 

বাজার সংশ্লিষ্ট জানিয়েছেন, অনেক কোম্পানি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরবর্তীতে তা পরিশোধ করতে পারে না। তারপর তারা পুঁজিবাজারকে বেছে নেন। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার অবহেলার কারণে বাজার থেকে টাকা উত্তোলন করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করে। সেই সব কোম্পানির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর এক বছরের মাথায় চলে আসে বাজারের জেড ক্যাটাগরির তালিকায়।
বাজার সংশ্লিষ্টদের সাথে একমত পোষন করেছেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল ফিনান্স বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. এম এ বাকি খলিলি বলেন, কোন কোম্পানি ডিফল্ড হলে সেই কোম্পানির ক্ষেত্রে বিএসইসিকে আরো সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে যেসব কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় সমস্যা রয়েছে। একই সঙ্গে এ ধরনের অভিযোগ থাকার পরও যেসব কোম্পানির পুঁজিবাজারে আসতে চাই তাদেরও নৈতিকতার বিষয় রয়েছে। কারণ তাদের কারণে বাজারে বিনিয়োগকারীরা ঝুকির মধ্যে পড়ছে। 
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ডিএসই’র সাবেক প্রেসিডেন্ড রকিবুর রহমান জানান, কোন কোম্পানি ঋণ খেলাপী, আর কোন কোম্পানিকে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করার সুযোগ দেয়া হবে তা একান্তই বিএসইসি দায়িত্ব। এ ধরনের কোনো কোম্পানির পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করার পর সাধারন বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর দায়িত্বও বিএসইসিকে নিতে হবে।
তিনি বলেন, উদোক্তারা কোম্পানি চালাতে পারবে কি পারবে না, তা অনুসন্ধান করেই তারা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহন করেন। তবে কেন সেই ঋণ পরিশোধ করার জন্য পুঁজিবাজারকে বেছে নিতে হবে? এ ধরনের মানসিকতা থেকে কোম্পানির উদ্যোক্তাদের বেরিয়ে আসা উচিত।
গত ১৪ আগস্ট আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংকের এভিপি ও ব্যবস্থাপক মোল্লা খলিলুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে। চিঠিতে জানানো হয়েছে, একমি ল্যাবরেটরিজের চেয়ারম্যান নাসির-উর-রহমান সিনহা তাদের ব্যাংক থেকে নেয়া একটি ঋণের ব্যক্তিগত গ্যারান্টার। ঋণটি এখন খেলাপি হয়ে যাওয়ায় একমি ল্যারেটরিজ যাতে পুজিবাজারে আইপিও ছাড়তে না পারে সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিএসইসিকে নির্দেশ দিয়েছে বলে অর্থমন্ত্রনালয় সূত্রে জানা গেছে।
আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংকের চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, মেসার্স সিনহা ইন্টিগ্রেটেড বিজনেস সার্ভিসেস লিমিটেডের বিনিয়োগ বাবদ খেলাপি দায় ৫ কোটি ৩৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, যা বর্তমানে সাব স্ট্যান্ডার্ডস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড, শ্যামলী থেকে মেসার্স সিনহা ইন্টিগ্রেটেড বিজনেস সার্ভিসেস লিমিটেডের অনুকূলে একমি ল্যাবরেটরিজের চেয়ারম্যান নাসির-উর-রহমান সিনহার ব্যক্তিগত গ্যারান্টির বিপরীতে কম্পোজিট বিনিয়োগ সীমা ২৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা মঞ্জুর করা হয়। নাসির-উর-রহমান সিনহা দ্যা একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং ওই কোম্পানির ১ কোটি ৩৪ লাখ ১৯ হাজার ১৫০টি শেয়ারের মালিক। এটি কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মেসার্স সিনহা ইন্টিগ্রেটেড বিজনেস সার্ভিসেস লিমিটেডের এমডি আনসার উদ্দিন সিনহা দ্যা একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের ২ লাখ শেয়ারের মালিক। চিঠিতে আরো বলা হয়, খেলাপি ঋণের ব্যক্তিগত গ্যারান্টার হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে নাসির-উর-রহমান সিনহার নাম খেলাপি গ্রাহক হিসেবে অন্তর্ভূক্তকরণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধিন রয়েছে।
বিএসইসির তালিকায় থাকা দ্যা একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের তথ্যে দেখা গেছে, কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে ৫ কোটি শেয়ার ছেয়ে ৩০০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা এবং প্রিমিয়াম চাওয়া হয়েছে ৫০ টাকা। মোট ৬০ টাকা অফার প্রাইজে প্রতিটি শেয়ারের জন্য আবেদন করবে বিনিয়োগকারীরা। প্রতিষ্ঠানটির ইস্যু ম্যানেজার হিসাবে কাজ করছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট।
এদিকে পুঁজিবাজার থেকে সর্বশেষ অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন পাওয়া এ্যাপোলো ইস্পাত লিমিটেডের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যংকে এ্যাপোলো ইস্তাতের দেনা ৪৩৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি ঋণ খেলাপি ও বেশিরভাগ ঋণ নিম্মমানে। কিছু ঋণ মন্দ ও ক্ষতিজনক বিসেবে শ্রেণীকৃত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সাধারন সম্পাদক আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, ঋণ খেলাপিদের পুঁজিবাজার থেকে বয়কট করা প্রয়োজন। তারা যেন পুঁজিবাজারে প্রবেশ করে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে এজন্য বিএসইসিকে শক্তিশালী হতে হবে। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিএসইসিকেই দায়বার নিতে হবে।

No comments: