Thursday, June 7, 2012

বাজেটে ঘাটতি ৫২ হাজার কোটি টাকা এ পরিমাণ উন্নয়ন বাজেটের প্রায় সমান


সরকার ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য ৫২ হাজার ৬৮ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট পেশ করেছে। এই পরিমাণ আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত উন্নয়ন বাজেটের প্রায় সমান। আগামী বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৫ হাজার কোটি টাকা। এর ফলে উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়তে পারে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিশাল ঘাটতি সংবলিত বর্তমান সরকারের এই চতুর্থ বাজেট উপস্থাপন করেন। ঘাটতির এ হার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ বলে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় জানান।
আগামী অর্থবছরের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের অভ্যন্তরীণ আয় হবে এক লাখ ৩৯ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। এ টাকা রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর এবং কর বহির্ভূত খাত থেকে আসবে। বাকী টাকা ব্যাংক ঋণ, সঞ্চয়পত্র বিক্রি এবং বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে আসবে।
আগামী অর্থবছরে এনবিআর এক লাখ ১২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকার যোগান দেবে। আয় ও মুনাফার কর, মূল্য সংযোজন কর, আমদানি-রফতানি শুল্ক, আবগারি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে এনবিআর এ টাকা আদায় করবে।
এনবিআর বহিভূর্ত কর থেকে আয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। এ অর্থ আসবে মাদক শুল্ক, যানবাহন কর, ভূমি রাজস্ব এবং নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প বিক্রয় থেকে। এছাড়া কর বহির্ভূত খাত থেকে আয় হবে ২২ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। জরিমানা, দ-, বাজেয়াপ্ত, ভাড়া, ইজারা, টোল, রেলপথ, ডাক ও কর ব্যতিত অন্যান্য খাত থেকে এ টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান হিসেবে ধরলে এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৬ হাজার ২৪ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে অনুদান ব্যতীত ঘাটতি ছিল ৪৫ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৪৬ হাজার ২২৮ কোটি টাকা করা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ১০ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা নেয়া হবে। এছাড়া সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ধরা হয়েছে সাত হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে নিট ঋণ নেয়া হবে ১২ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছর বৈদিশিক উৎস থেকে ২০ হাহার ৩৯৮ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হবে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা যাবে আগের নেয়া ঋণের সুদ ও কিস্তির টাকা পরিশোধে।
চলতি অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেও বছর শেষে তা ২৯ হাজার ১১৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। চলতি অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণের সমালোচনা করে আসছিল বিরোধী দলসহ ব্যবসায়ী মহলও। তাদের বক্তব্য, সরকার ঋণ বেশি নেয়ায় বেসরকারি খাত প্রয়োজনীয় অর্থ পাচ্ছে না।
এছাড়া এডিপির সমপরিমাণ টাকা ঘাটতি থাকায় এর সমালোচনা করেছেন অর্থনীতিবিদরা। এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলী খান বলেন, বাজেটে সামগ্রীক ঘাটতি উন্নয়ন বাজেটের সমান। অর্থাৎ ৫২ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি আর উন্নয়ন বাজেট ৫৫ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব খরচ সরকারকে বহন করতেই হবে। ফলে উন্নয়ন ব্যহত হবে। এ বিষয়টি সরকারকে ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, সরকারকে চলতি অর্থবছরে এডিপি কাটছাট করতে হয়েছে। কারণ সরকার বিদেশী ঋণ পায়নি। এজন্য দেশীয় ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ বেড়েছে। আবার এডিপি কমানো হয়েছে। গত বছর এডিপি নেয়া হয়েছিল ৪৬ হাজার কোটি টাকার। পরে অর্থের সংস্থান না হওয়ায় এডিপি কমিয়ে ৪১ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এ বছরও বাজেটে যেভাবে ঘাটতি হতে যাচ্ছে তাতে সরকারের পক্ষে শেষ পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।

No comments: