অর্থনীতি প্রতিবেদক : দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি এক অংকে (সিঙ্গেল ডিজিট) নেমে এসেছে। বর্তমানে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে। যা গত মার্চ মাসে ছিল ১০ দশমিক ১০ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে কমেছে শূণ্য দশমিক ১৭ শতাংশ। গত মাসের তুলনায় খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমেছে। এ হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১২ শতাংশে, যা গত মাসে ছিল ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। আবার সামান্য কমেছে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও। এর হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশে। যা গত মার্চ মাসে ছিল ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব থেকে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
গতকাল শনিবার সং¯’াটি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের মূল্যস্ফীতির সার্বিক অব¯’া তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন ডাকে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সং¯’ার মহাপরিচালক শাহজাহান আলী মোল্লা ও ন্যাশন্যাল অ্যাকাউন্টিং উইং এর পরিচালক আবুল কালাম আজাদ।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতি এক অংকে নেমে আসায় প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। তাছাড়া বিনিয়োগকারীরাও আ¯’া ফিরে পাবে। ফলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ সম্ভাবনা বাড়বে। বর্তমানে দেশে কৃষি কার্যক্রম ভালভাবেই চলছে বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়। বিশেষ করে চাউলের দাম নিম্নমুখী থাকায় খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমেছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিম্মমুখী প্রবণতার অন্যতম কারণ হ”েছ চাউলের দাম ¯ি’তিশীল থাকা এবং কোন ক্ষেত্রে কমে যাওয়া। ডলারের দাম কমে যাওয়ায় আমদানী পণ্যের দামে এর প্রভাব পরবে অর্থনৈতিক খাতে যেসব চাপ চলতি অর্থবছরের শুরুতেই ছিল সেগুলো কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতির ওপর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়ার এ প্রবণতা ধরে রাখার তাগিদ দিয়েছেন এ অর্থনীতিবিদ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায়, গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। এপ্রিল মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২১ শতাংশে। যা মার্চমাসে ছিল ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। খাদ্য পণ্যের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ১ শতাংশ, যা মার্চ মাসে ছিল ৭ দশমিক ২১ শতাংশ। আবার খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। যা মার্চ মাসে ছিল ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ।
অন্যদিকে এপ্রিল মাসে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশে। যা মার্চ মাসে ছিল ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। বর্তমানে খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ। যা মার্চে ছিল ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। যা মার্চে ছিল ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ।
সূত্র জানায়, এর আগে ২০১১ সালের মার্চ মাসে গত কয়েক বছরের সব রেকর্ড ভেঙ্গে মূল্যস্ফীতি হার দুই অঙ্কে (ডাবল ডিজিেিট) উঠে যায়। ওই সময় সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশে। ফেব্রুয়ারী মাসে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ। জানুয়ারী মাসে ছিল ৯ দশমিক ৪ শতাংশ।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। সেসময় সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশে। আগস্টে ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। খাদ্য পণ্যের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছিল ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশে। যা তার আগের মাসে আগস্টে যা ছিল ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ।
গত বছরের ডিসেম্বরে এসে মূল্যস্ফীতিতে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। ডিসেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্টে এ হার দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশে। যা নবেম্বর মাসে ছিল ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে পয়েন্ট টু পয়েন্টে মোট মূল্যস্ফীতি কমেছে শূণ্য দশমিক ৭৪ শতাংশ। এদিকে খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতিও কমে যায় ওই মাসে। গ্রাম ও শহরের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে আসে।
No comments:
Post a Comment