Wednesday, February 22, 2012

অভিহিত মূল্যের নিচে ১৮ মিউচ্যুয়াল ফান্ড পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার কান্ডারির বেহাল দশা


সাখাওয়াত হোসেন সুমন: পুঁজিবাজারের কান্ডারি বা মন্দাবস্থা থেকে বাজার স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাওয়ার হাতিয়ার মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বেহাল অবস্থা। তালিকাভুক্ত ৩৮টি মিউচ্যুয়াল ফান্টের মধ্যে বর্তমানে অভিহিত মূল্যের নিচে অবস্থান করছে ১৮টির ইউনিটের দর। অথচ একমাস আগেও অভিহিত দরের নিচে ছিলো ৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর। ফলে ক্রমেই মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে বাজারের প্রাণ বলা হলেও বর্তমানে এই খাতটির অবস্থা খুবই করুন। বছর জুড়ে আশংকাজনক হারে এসব ফান্ডের ইউনিটের দর বর্তমানে এমন পর্যায়ে এসে থেমে যে যারা  আইপিওর মাধ্যমে এই ইউনিট পেয়েছিলো তাদের অবস্থা ও বর্তমানে নাজুক। আইপিওতে বিনিয়োগ করেও তাদের পুঁজি এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে।
তালিকাভুক্ত মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে বর্তমানে ১৮টির দর অভিহিত মূল্যের নিচে। এগুলোর মধ্যে ফার্স্ট জনতা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের প্রতি ইউনিট লেনদেন হচ্ছে ৭ টাকা ৬০ পয়সা, এবি ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৯ টাকা ৫০ পয়সা, এআইবিএল ফাস্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৭ টাকা ৮০ পয়সা এবং ডিবিএইচ ফাস্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৭ টাকা দরে লেনদেন হচ্ছে। এছাড়া গ্রীন ডেলটা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৫ টাকা ৮০ পয়সা, আইসিবি থার্ড এন আরবি ৬ টাকা ৬০ পয়সা, আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হচ্ছে ৭ টাকা ৭০ পয়সা। অন্যদিকে আইএফআই এলের প্রতিটি ইউনিট লেনদেন হচ্ছে ৫ টাকা ১০ পয়সায়। আইসিবি ইমপ্লয়ী ও আইএফ আইসি ফাস্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হচ্ছে যথাক্রমে ৭ টাকা ৩০ পয়সা ও ৬ টাকা ৭০ পয়সায়। এছাড়া পিএইসপি মিউচ্যুয়াল আন্ডের ইউনিট ৫ টাকা ৮০ পয়সা,পপুলার ফাস্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৫ টাকা ৯০ পয়সা এবং প্রাইম ফাস্ট আইসিবিএ ৬ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। আর রিলাইনেন্স ফাস্ট মিউচ্যুযাল ফান্ড এসইবিএল মিউচ্যুয়অল ফান্ড ও ট্রাষ্ট ব্যাংক ফাস্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ্প্রতি ইউনিট বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে, ৮ টাকা ৯০ পয়সা, ৮ টাকা ৮০ পয়সা এবং ৭ টাকা ৫০ পয়সায়।
এদিকে ফান্ডগুলোর এই ভগ্নদশা সম্পর্কে এর (ফান্ডগুলোর) বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সাধারণ বনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিস্টরা। ফান্ডগুলো তাদের সংগ্রহের নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ  পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ না করে অন্য কোথাও বিনিয়োগ করছে বলে বলে অভিযোগ তাদের।
২০১১ সালে বাজারে এসেছে ৯টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এই ফান্ডগুলো গড় আকার ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি। আর এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নেয়া হযেছে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মতে, ২০১১ সাল জুড়ে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করেছে। এই অস্তিরতার জন্য তারা দায়ী করেছে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, এসইসি, ডিএসই ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের। আর বাজারকে সঠিক সময়ে বিনিয়োগ না করায় গত বছরের প্রথম থেকেই  প্রশ্নবিধ হয়েছে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ।
সংশ্লিষ্টদের মতে মিউচ্যুয়াল ফান্ড বাজারে আনা হয় মূলত তারা বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য। কিন্তু গত বছর তারা বাজারকে যেভাবে সার্পোট দিয়েছে তা রহস্য জনক। তারা বলেন মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ যথাযথ হলে বাজারের এই পরিস্থিতি হওয়ার কথা নয়। ফান্ডগুলো চলতি বছর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ না করে এই টাকা অন্য কোথা বিনিয়োগ করেছে এমন ইঙ্গিত দিয়ে তারা বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে বাজারের প্রাণ বলা হলে চলতি বছর এর কোন প্রভাব চোখে পড়েনি। 
এ প্রসঙ্গে ডিএসই বর্তমান পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডন্ট রকিবুর রহমান বলেন, মিউচ্যুয়ার ফান্ডগুলো তাদের অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা কথা । তারা যদি এটি না করে থাকে তবে তা অমানবিক। মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো এই টাকা বিনিয়োগ না করে অন্য কোথাও বিনিয়োগ করেছে কিনা তা বাজারের স্বার্থে খতিয়ে দেখা উচিত বলে জানান তিনি।  

No comments: