Monday, December 26, 2011

স্বচ্ছতা বাড়াতে আগামী বছর বিন্যস্ত হচ্ছে পুঁজিবাজার

বর্তমান পরিচালকরা থাকছে না আসবে নতুন প্রশাসন

সাখাওয়াত হোসেন সুমন: বর্তমান পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতা বাড়াতে ২০১২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ধাপে ধাপে কার্যকর করা হবে স্টক এক্সচেঞ্জের বিন্যস্তকরণ বা ডিমিউচুয়ালাইজেশন। বিন্যস্তকরণের মাধ্যমে বিভাজন হবে স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা। একই সঙ্গে পরিবর্তন হবে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা, কার্যক্রম ও জবাবদিহিতা এবং লেনদেনে মধ্যস্থতাকারী (ব্রোকারেজ) প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকান্ড ও নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া। বিন্যস্তকরণের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিচালকদের পরিবর্তে আসবে নতুন প্রশাসন। এজন্য প্রাথমিক কার্যক্রম হিসেবে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি বিধানের সংস্কার, সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন এবং লেনদেন পদ্ধতিসহ সামগ্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ধারণা পত্র তৈরির কার্যক্রমও ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। আজ মঙ্গলবার ডিএসইর বোর্ড সভায় ধারণা পত্র চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে। চূড়ান্ত ধারণা পত্র আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মূলধন অধিশাখায় জমা দেয়ার জন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএসই’র সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, আজ ডিমিউচুয়ালাইজেশনের ধারণাপত্র চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার জন্য ডিএসই বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হবে। চূড়ান্ত ধারণাপত্র মন্ত্রনালয়ে  জমা দেয়া হবে ২৯ ডিসেম্বর। ২০১২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ধারণাপত্র অনুযায়ী ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়ন করা হবে। এতে বাাজরের কী সুবিধা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন বাস্তবায়ন করা হলে দৃশ্যত এর কাঠামোগত পরিবর্তন হবে। এবং বর্তমানের কো-অপারেটিভ সোসাইটির পরিবর্তে কোস্পানির মতো স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালিত হবে। এতে স্টক এক্সচেঞ্জে কোনো সদস্য থাকবেন না। পরিবর্তে সবাই শেয়ারহোল্ডার হিসেবে বিবেচিত হবেন। তাছাড়া বর্তমান আইন অনুযায়ী কেবল স্টক এক্সচেঞ্জে সদস্যরা ব্রোকার ব্যবসা করতে পারে কিন্ত পুঁজিবাজার বিন্যন্তকরণ সম্পন হলে যে কেউ নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষে ব্রোকার ব্যবসা করতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন বিষয়ে অনেকের এমন ধারণা রয়েছে এটি বাস্তবায়িত হলে শেয়ারবাজারে ব্যাপক পরিবর্তন হয়ে যাবে এবং কোম্পানির শেয়ারদর ও বাজার সূচক বাড়বে। প্রকৃতপক্ষে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের সঙ্গে বাজার পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কোনো সংযোগ নেই।
ডিএসইর সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক সালাউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজারে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন করা হয়েছে। কিন্ত সিংহভাগ দেশে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার কার্যকত সুফর পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, নেপালে স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়াটি সরকার করেছিল কিন্ত তা সঠিক প্রক্রিয়ায় অনুসরণ করা হয়নি। সঠিকভাবে এবং সুশাসন ও উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় স্টক এক্সচেঞ্জে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন বাস্তবায়ন করা হলে স্টক এক্সচেঞ্জের কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণের পথ সুগম হয়।

সালাউদ্দিন আহমেদ খান এখনই শেয়ারবাজারে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন না করে ধাপে ধাপে করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বর্তমান অবস্থায় ডিএসই বোর্ড থেকে সদস্য পরিচালক সংখ্যা কমিয়ে ডিএসইর সিইও, চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার, চিফ অপারেটিং অফিসারসহ যারা বাজার বিষয়ে অভিজ্ঞ তাদের দিয়ে পরিচালনা পরিষদ গঠন করা যেতে পারে। এতে স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালনায় পেশাদারিত্ব আসবে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, ডিএসইর ওয়েব সাইটের মাধ্যমেই সাধারণ বিনিয়োগাকরীদের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানির সংবেদনশীল তথ্য প্রচার করা হয়। যে সকল তথ্যের মাধ্যমে কোম্পানির মূল্য উঠা নামা করে। এক্ষেত্রে নির্বাচিত পরিচালকরা চাইলেই তাদের ব্যবসায়ীক ফায়দা লুটার জন্য যে কোন কোম্পানির সংবেদনশীল তথ্যের ব্যবহার করতে পারে। যা পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতার পরিপন্থি।
বিন্যস্তকরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণভাবে পৃথক হয়ে যাবে। পুঁজিবাজারের সামগ্রিক কর্মকান্ডে পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যক্ষ কোন হস্তক্ষেপ থাকবে না। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাও পুনর্বিন্যাস হবে। বিন্যস্তকরণের মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করে প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ারের একটি নির্দিষ্ট অংশ বর্তমান সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করা হবে আর বাকি শেয়ার ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।
বর্তমান পুঁজিবাজারে ২৫ জন পরিচালনাক রয়েছে। তাদের মধ্যে ১২ জন মনোনিত এবং বাকি ১২জন নির্বাচিত। নির্বাচিত ১২জন প্রত্যেকে কোন না কোন ব্রোকার হাউজের মালিক। পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতার প্রশ্নের প্রতিবারই প্রশ্ন তুলা হয়, যারা পুঁজিবাজার সংরক্ষন করবে তারা নিজেরাই পুঁজিবাজারের ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুন্ন  হচ্ছে পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতা। বিনিয়োগকারীদের এমন অনুযোগের তীর গিয়ে ঠেকে বর্তমান পুঁজিবাজার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ১২জন পরিচালকের উপর। পুঁজিবাজার বিন্যস্তকরণ কার্যক্রম এবার জোড়ে শোরে শুরু হওয়ায় তার যথাযথ বাস্তবায়নের দাবী বিনিয়োগকারীদের।

No comments: