Friday, October 14, 2011

অগ্রাধিকার শেয়ারে পুঁজিবাজার থেকে কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে কোম্পানিগুলো


অগ্রাধিকার শেয়ারে পুঁজিবাজার থেকে কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে কোম্পানিগুলো

সাখাওয়াত হোসেন সুমন: সুনির্দিষ্ট নিয়ম না থাকায় অগ্রাধিকার শেয়ার ইন্স্যুর নামে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন কোম্পানি মেতে উঠে কোটি টাকার খেলায়। এছাড়া রূপান্তরযোগ্য অগ্রাধিকার শেয়ার ইস্যু, আগের বুকবিল্ডিং পদ্ধতির অপব্যবহার এবং সরাসরি তালিকাভুক্তির সুযোগ নিয়ে কোম্পানিগুলো বাজার থেকে হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন।

রাইট শেয়ার অনুমোদনের জটিলতার কারণে বিভিন্ন কোম্পানি  অগ্রাধিকার শেয়ারকে প্রধান্য দিয়ে মূলধন বৃদ্ধির পথ বেছে নিয়েছে।  এগুলোর মধ্যে আফতাব অটোমোবাইলস, পিপলস লিজিং, বাংলাদেশ থাই অ্যালুমিনিয়াম, এস আলম কোল্ড রোল্ড, বিডিকম লিমিটেড এবং অগ্নি সিস্টেমস অগ্রাধিকার শেয়ার ইস্যু করে বাজার থেকে হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে।

গত ২ বছরে নানা প্রক্রিয়া অবলম্বন করে কোম্পানিগুলো বাজার থেকে শুধু টাকা তুলেই নিয়েছে বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের কিছুই দিতে পারেনি। গত দুই বছরে আটটি কোম্পানি রূপান্তরযোগ্য অগ্রাধিকার শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে বাজার থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। এছাড়া সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে তিনটি কোম্পানির উদ্যোক্তারাও তুলে নিয়েছে ১ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা বলে ডিএসই সূত্রে জানা যায়।  অপরদিকে পূর্বের বুকবিল্ডিং পদ্ধতির অপব্যবহার করে  মূল্য নির্ধারণের পর প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ৩টি কোম্পানি বাজার থেকে সমপরিমাণ অর্থ তুলে নিয়েছে। সূত্র মতে প্রতিটি পর্যায়ে প্রচলিত বিধি অনুসরণ করা হলেও শেয়ারের অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করে বাড়তি এ অর্থ তুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

এসইসি থেকে তথ্যানুযায়ী, গত দেড় বছরে অগ্রাধিকার শেয়ার ছেড়ে সর্বোচ্চ ৪১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড । দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সামিট পাওয়ার লিমিটেড। কোম্পানিটি অগ্রাধিকার শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে ৩০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। বাংলাদেশ থাই অ্যালুমিনিয়াম ৭৫ কোটি টাকা, পিপলস লিজিং ১২০ কোটি টাকা, এস আলম কোল্ড রোল্ড ৫৩ কোটি টাকা,আফতাব অটোমোবাইলস ১৮০ কোটি টাকা, বিডিকম লিমিটেড ২৪ কোটি টাকা এবং অগ্নি সিস্টেমস ২০ কোটি টাকার অগ্রিধিকার  শেয়ার ইস্যু করেছে।

রাইট শেয়ার ছাড়ার যোগ্যতা না থাকলেও কোম্পানিগুলো অগ্রাধিকার শেয়ারের ছেড়ে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের পথ বেছে নেয়। এ পদ্ধতির সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় এর মধ্য দিয়ে কোম্পানি সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাজার সংশ্লিষ্টরা। 

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী অগ্রাধিকার শেয়ারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহের অনুমোদন দিয়েছে এসইসি। যাদের রাইট শেয়ার ছাড়ার যোগ্যতা নেই। এদের মধ্যে বিডিকম লিমিটেড ১ঃ১ হারে মোট ১ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার রাইট শেয়ার ছাড়ার জন্য এসইসিতে দুই বার আবেদন করে। কিন্ত আবেদনটি অযৌক্তিক মনে হওয়ায় এসইসি তা বাতিল করে দেয়। কিন্ত পরবর্তিতে কোম্পানির পক্ষ থেকে ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকার অগ্রাধিকার শেয়ার ছাড়ার আবেদন করা হলে এসইসি তা অনুমোদন করে। একইভাবে পরিচালকদের হাতে মাত্র ৬.৩৯ শতাংশ শেয়ার থাকায় অগ্নি সিস্টেমসকে রাইট শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দেয়নি এসইসি। কিন্তু অগ্রাধিকার শেয়ার ছেড়ে ইতোমধ্যেই কোম্পানিটি ২০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে পুঁজিবাজার থেকে।

অগ্রাধিকার শেয়ার ছাড়ার নির্ধারীত সময়ের পরই তা সাধারণ শেয়ার রূপান্তরের সুযোগ থাকে। বিশ্বের বিভিন্নি দেশে কোম্পানি মুনাফা অর্জন করলে প্রথমে অগ্রাধিকার শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ দিতে হয়। কিন্ত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কয়েকদিনের মধ্যে অগ্রাধিকার শেয়ার ছেড়ে কোম্পানিগুলো বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। তথ্যানুযায়ী অগ্রাধিকার শেয়ার থেকে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তরের জন্য কোম্পানিগুলো সর্বোচ্চ চার মাস সময় নিয়েছে। এর মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেড ৩ মাস, আফতাব অটো ৪ মাস সময় নিয়েছিল। এছাড়া অগ্রাধিকার শেয়ার ইস্যুকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল ৩ মাস এবং বিডি থাই দেড় মাস সময় নিয়ে অগ্রাধিকার শেয়ারকে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর করেছে।

রাইট শেয়ারের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি মূলধন বাড়াতে পারে। এজন্য কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহনের প্রয়োজন হয়। এরপর শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিতে হয় বিশেষ সাধারণ সভার (ইজিএম) মাধ্যমে । এসইসির কাছে রাইট শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন চেয়ে আবেদন করতে হয়। এসইসির পক্ষ থেকে কোম্পানির সকল বিষয় পর্যালোচনা করে এর আগে শেয়ারবাজারের মাধ্যমে সংগৃহিত অর্থ সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করে এসইসি। প্রয়োজনীয় সকল কিছু ইতিবাচক প্রতিবেদন পেলেই রাইট শেয়ার অনুমোদন করা হয়। আর সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি শেষ করতে সময় লাগে কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ মাস ।

রাইট শেয়ার ইস্যুর এ দীর্ঘসূত্রিতা এবং এসইসির নানা বিধ তদন্তের কারণে কোম্পানি ভিন্ন পথ হিসাবে অগ্রাধিকার শেয়ার ইস্যুর প্রতি ঝুঁকে পড়ে। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ এবং ইজিএমে অনুমোদনের পর স্বল্প সময়ের মধ্যেই অগ্রাধিকার শেয়ার ছাড়ার অনুমতি পেয়ে যায় এসইসির কাছ থেকে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য রাইট শেয়ারের ক্ষেত্রে ব্যাপক যাচাই-বাছাই করা হলেও অগ্রাধিকার শেয়ারের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।  কোম্পানির ইজিএমে অনুমোদনের পর ২৫ থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যেই অধিকাংশ কোম্পানি অনুমোদন পেয়েছে এসইসির কাছ থেকে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় কোম্পানি যেভাবে প্রস্তাব উপস্থাপন করে সেই ভাবেই  অগ্রাধিকার শেয়ারের সব রকম শর্ত বহাল রেখেছে এসইসি।

No comments: