পাঁচ বছরের সর্বনিম্মে পুঁজিবাজারের গড় পিই
সাখাওয়াত হোসেন সুমন॥ গত পাঁচ বছরের সর্বনিম্ম পর্যায়ে পুঁজিবাজারের গড় পিই। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর হিসাবে বর্তমান বাজারের গড় পিই ১৫.৫৮ পয়েন্ট। পুঁজিবাজারের গড় পিই সন্তুষজনক পর্যায়ে থাকলেও বিনিয়োগকারীদের ক্ষমতা নেই। এজন্যই মূলত বাজারের মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। তাদের মতে, একদিকে মার্জিন ঋণ পরিশোধে মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকার হাউজগুলোর ফোর্স সেল অপরদিকে ক্রমাগত মন্দায় নতুন বিনিয়োগে অনিহা বর্তমান পুঁজিবাজারকে আস্থাহীন করে তুলেছে।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর হিসাবে গত পাঁচ বছরের সর্বনিম্ম পর্যায়ে রয়েছে পুঁজিবাজারের গড় পিই। এর আগে ২০০৬ সালে ডিএসই গড় পিই ছিল ১৩.৭৮ পয়েন্ট। তারপর থেকে ক্রমাগতভাবে বেড়েছে বাজারের গড় পিই। ২০০৭ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিএসই’র গড় পিই ছিল ১৯.৭৯ পয়েন্ট। একই সাময়ে ২০০৮ সালে ছিল ২০.৬৫ পয়েন্ট। ২০০৯ সালে ছিল ১৮.২১ পয়েন্ট এবং ২০১০ সালে ছিল ২৬.২৯ পয়েন্ট। একই সাথে চলতি বছরের ৯ মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ম পর্যায়ে অবস্থান করছে পুঁজিবাজারের গড় পিই । সেই হিসাবে জানুয়ারী মাসে পুঁজিবাজারের গড় পিই ছিল ২৬.৬৬ পয়েন্ট, ফেব্র“য়ারিতে ছিল ১৭.৭৯ পয়েন্ট, মার্চে ছিল ১৯.৩৪ পয়েন্ট, এপ্রিলে ছিল ১৭.৭৯ পয়েন্ট, মে মাসে ছিল ১৬.৩০ পয়েন্ট। এছাড়া জুন মাসে ছিল ১৬.৫৫ পয়েন্ট, জুলাই মাসে ছিল ১৭.৫৩ পয়েন্ট, আগস্টে ছিল ১৬.৭০ পয়েন্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে ১৫.৫৮ পয়েন্ট।
আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী শেয়ারের পিই ২০ শতাংশের বেশি হলে সেই কোম্পানির শেয়ারকে অতিমূল্যায়িত বলা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষপটে পিই ৪০ এর নিচে থাকা কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগে ঝুঁকিমুক্ত বলা হয়। এনিয়ে এসইসির আইন ও রয়েছে। বর্তমানে ৪০ শতাংশের নিচে পিই কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ে ঋণ সুবিধা প্রদানেরও অনুমতি আছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের।
বাজার বিশ্লেষক আবু আহম্মেদ বলেছেন, বাজারের গড় পিই ভালো থাকলে তো হবে না বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার ক্ষমতা থাকতে হবে। বিনিয়োগকারীদের যখন শেয়ার কেনার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে তখন স্বাভাবিকভাবেই বাজার চাঙ্গাভাব ফিরে আসবে। তিনি পুঁজিবাজারের দিকে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ আবার ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের আমানত সুদের হার হ্রাসের আহবান জানান। ব্যাংকের আমানতের সুদের হার বেশি হলে স্বাভাবিকভাবে মানুষ পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংকে জমা রাখবে। এতে বিনিয়োগকারীদের যতই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আহবান জানানো হোক তারা আসবে না। কারণ বিনিয়োগকারীদের যেখানে লাভ সেখানেই যাবে।
বাজার মূল্য ও আয়ের (পিই) অনুপাত: শেয়ারবাজারে গুরুত্বপূর্ন পরিমাপক হচ্ছে পিই অনুপাত । সময় সময় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) নির্দেশে মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারেজ হাউসগুলো কোম্পানির পিই হিসাবে মার্জিন ঋণ প্রদান করে থাকে। পিই অনুপাতের পূর্ণ রূপ হলো বাজার মূল্য ও আয়ের অনুপাত । অর্থাৎ, কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) এবং শেয়ারের বর্তমান বাজার মূল্যের অনুপাত।
প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানি নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ মুনাফা অর্জন করেছে তাই শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস। আর বাজারমূল্য হলো শেয়ারবাজারে ওই কোম্পানির শেয়ারের বর্তমান দর। শেয়ারটির প্রকৃত আয়ের তুলনায় কত বেশি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে তা হিসাব করা হয় পিই অনুপাতের মাধ্যমে । শুধু তাই নয়, নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে ঝুঁকি নির্ণয়ে পিই অনুপাতই সবচেয়ে কার্যকর মাপকাঠি।
পিই অনুপাত নির্ণয় করতে হলে শেয়ারের বর্তমান বাজার দরকে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দিয়ে ভাগ করতে হবে। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারী তার ক্রয়কৃত শেয়ারের ভবিষ্যৎ আয়ের মতো এবং কত লভ্যাংশ আসতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।
প্রতিদিন শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দর ওঠানামার সঙ্গে সঙ্গে পিই অনুপাতও হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। তাই প্রতিদিনই শেয়ার কেনার আগে ওই কোম্পানির সেদিনকার পিই অনুপাত জেনে নেয়া ভালো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

No comments:
Post a Comment